ঢাকা জেলার শাহজাহানপুর থানাধীন ১২ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত আবুজর গিফারী কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীগণ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সন্তোষজনক ও কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও সুখ্যাতি অক্ষুন্ন রেখে আসছে। কলেজে রয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক। কলেজটি ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থল ও সিটি কর্পোরেশনের মহাসড়কের ত্রিমুখী সংযোগস্থল এবং ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।
কলেজের নামকরণ হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর সাহাবী হযরত আবুজর গিফারী (রা:) এর নামে। তিনি ছিলেন সত্যের সৈনিক। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে ন্যায়বোধের চেতনা জাগ্রত হবে- এ মহৎ উদ্দেশ্যেই ‘আবুজর গিফারী’ নামকরণ করা হয়েছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহিদ ফারুক ইকবাল আবুজর গিফারী কলেজ ছাত্র সংসদের (ছাত্রলীগ) নির্বাচিত জি.এস ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান যখন জাতীয় সংসদের অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেন, তখন ফারুক ইকবাল মালিবাগ এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে রামপুরা টেলিভিশন ভবনের দিকে অগ্রসর হলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। ফারুক ইকবালকে আবুজর গিফারী কলেজের পাশেই স্বাধীন বাংলার পতাকা দিয়ে দেহ আবৃত করে সমাধিস্থ করা হয়। এভাবেই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে আবুজর গিফারী কলেজ সম্পৃক্ত হয়। স্বাধীনতার প্রথম শহিদ ফারুক ইকবালের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কলেজের পাঠাগারের নামকরণ করা হয়েছে- ‘‘শহিদ ফারুক ইকবাল পাঠাগার’’।
১৯৬৭ সালে আবুজর গিফারী কলেজ মগবাজারের একটি ভাড়াবাড়ীতে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে বর্তমান মারুফ মার্কেটের উত্তর পাশে ৭২, মালিবাগে কলেজটি স্থানান্তরিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বরাবর কলেজের নামে মালিবাগ বাজার রোডে সরকার কর্তৃক হুকুম দখলকৃত (১০.৩৯ একর জমি) স্থানে জমি বরাদ্দের আবেদন করা হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর উক্ত জমি থেকে ২ একর জমি কলেজের নিকট ০৭-০৫-১৯৮৩ তারিখে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকার কর্তৃক হস্তান্তর করা হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে কলেজটি উক্ত ২ একর জমিতে অবস্থান করছে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর কার্যকাল ছিল ১৯৬৭-১৯৮০ সাল পর্যন্ত। কলেজটি মালিবাগে স্থানান্তরিত হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির সাথে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিএম শাখা চালু করা হয়। অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের পর এ প্রতিষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ এ.কে.এম জহিরুল ইসলাম অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। অধ্যক্ষ এ.কে.এম জহিরুল ইসলাম কলেজের উত্তর পাশের একতলা ভবনের ওপর স্ব-অর্থায়নে তিন তলা নির্মাণ করেন। তৎকালিন সরকার একতলা ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করেছিলেন। এ সময়ে কলেজে প্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স অধিভুক্তি নেয়া হয়। এরপর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও সমাজকর্মে মাস্টার্স এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, সমাজকল্যাণ বিষয়ে অনার্স খোলা হয়। অধ্যক্ষ এ. কে.এম জহিরুল ইসলাম ১৯৮০-২০০৩ সাল পর্যন্ত এ কলেজে কর্মরত ছিলেন। এরপর কলেজের উপাধ্যক্ষ নূরুন্ নবী সিদ্দিকী অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
অধ্যক্ষ নূরুন্ নবী সিদ্দিকী দায়িত্বরত অবস্থায় মার্কেটিং, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স শেষ পর্বের পাঠদানের অনুমতি পায়। তিনি উত্তর পাশের একতলা হলরুম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। অত্র এলাকার এম.পি জনাব রাশেদ খান মেননের প্রচেষ্টায় কলেজ উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং আটতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২য় তলা পর্যন্ত শেষ হয়। অধ্যক্ষ নূরুন্ নবী সিদ্দিকী ২০০৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। অত:পর এ প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক শিরিন আখতার বানু অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক হন ২০১৬ সালে।
অধ্যক্ষ শিরিন আখতার বানু দায়িত্ব গ্রহণের পর কলেজে স্নাতক পর্যায়ে বাংলা, গণিত, অর্থনীতি, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, প্রফেশনাল বি.বি.এ ও প্রফেশনাল থিয়েটার এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়ে অধিভুক্তি পায়। কলেজের দোতালা ভবনের ৮ তলা পর্যন্ত (ICT ভবন) উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারিত হয়। একটি শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কলেজের উত্তর পূর্ব কোণে হল রুমকে সম্প্রসারিত করে প্রশস্ত করা হয়েছে। হল রুমের উপর তলায় একটি প্রশস্ত লাইব্রেরী এবং বিজ্ঞানাগার নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত লাইব্রেরীর এক অংশে ‘‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’’ খোলা হয়েছে; উদ্বোধন করেছেন জনাব তোফায়েল আহমেদ এম.পি। কলেজে রোভার স্কাউটিং দল এবং English Language club গঠন করা হয়েছে। Education Management system digitalized করণের প্রক্রিয়া চলছে। ICT ভবনের পাশে নতুন অপর একটি ৮ তলা ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ কাজে টাকা বরাদ্দে সহযোগিতা করেছেন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক এম.পি।
বর্তমানে কলেজে মানসম্মত শিক্ষক, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ এবং পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশস্ত খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে কলেজটি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠায় একটি আদর্শ বিদ্যাপিঠে পরিণত হয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে ‘নৈতিকতা বিষয়ক কার্যক্রম’ ক্লাস রুটিনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যায়বোধ জাগ্রত হচ্ছে- যা কি না একটি জাতি গঠনে খুবই প্রয়োজন।
বর্তমানে যে সকল বিষয়ে কলেজে পাঠদান করা হয় তা নিম্নরূপ :
উচ্চ মাধ্যমিক : বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা
কারিগরি : HSC(BM)
স্নাতক : বি.এ, বিএসএস ও বিবিএস
অনার্স
মানবিক : বাংলা, ইংরেজি, সমাজকর্ম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বাণিজ্য : হিসাববিজ্ঞান,মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
বিজ্ঞান : গণিত
প্রফেশনাল কোর্স : বিবিএ, থিয়েটার ও মিডিয়া স্টাডিজ
মাস্টার্স ১ম পর্ব
মানবিক : রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বাণিজ্য : ব্যবস্থাপনা ও মার্কেটিং
মাস্টার্স শেষ পর্ব
মানবিক : রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বাণিজ্য : ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং ও হিসাববিজ্ঞান
মালিবাগে স্থানান্তরিত হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির সাথে বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডেও বিএম শাখা চালু করা হয়েছে।